বিক্ষোভের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি একটি হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁকে একটি ‘নিরাপদ’ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, লাখ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার বাসভবনে প্রবেশ করেছে।
Bangladesh Protests :
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, তিনি তাঁর বোন রেহানাকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’ ত্যাগ করেছেন। তাঁকে হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই হেলিকপ্টারটি বাংলাদেশ বায়ুসেনার এয়ার কমোডর আব্বাস উড়িয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি ১০১ স্কোয়াড্রনের সদস্য। শেখ হাসিনা দিল্লিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন ।
বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়, যা ছিল ৪৫ মিনিট। অন্যদিকে, বিভিন্ন সূত্র বলছে, পুরো প্রক্রিয়াটি সেনাবাহিনী ও দিল্লির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়েছে। এরপরই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একটি অংশ দাবি করছে যে, দেশ ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। তবে, তিনি সেই সুযোগ পাননি। একটি সূত্রের মতে, সেনাবাহিনী নাকি তাকে এই সুযোগ দেয়নি। তবে, সরকারি কোনো সূত্র থেকে এই দাবির সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। ( আরও পড়ুন : Ayodhya Gangrape Case : অযোধ্যা গণধর্ষণ মামলা ‘নাবালিকা মেয়েকে বারবার ধর্ষণ, ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে )
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। হাসিনা দেশের আকাশসীমা পেরোনোর পরই তাঁর ভাষণ শুরু হয়। খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশ সংসদের স্পিকারকে আপাতত ক্ষমতা হস্তান্তর করা হচ্ছে। এরপর একটি তদারকি সরকার গঠিত হবে, যার নেতৃত্বে তদারকি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। বছরখানেক পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এ সবই এখন খুবই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে।
হেলিকপ্টারে বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। একটি সূত্র জানায়, হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, কিন্তু নয়াদিল্লি থেকে জানানো হয়, তাঁকে উদ্ধার করতে ভারত থেকে বাংলাদেশে কোনো বিমান পাঠানো সম্ভব নয়। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের আকাশসীমায় ভারতীয় বিমান প্রবেশ করলে আইন লঙ্ঘিত হতে পারে। তাঁকে প্রথমে ভারতে পৌঁছাতে হবে এবং সেখান থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে দিল্লি যাওয়া সম্ভব নয়, তাই তাঁর নিকটবর্তী অবতরণ স্থান হতে পারে ত্রিপুরার আগরতলা বিমানবন্দর। এরপর সেখান থেকে তাঁকে বিশেষ বিমানে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়। এছাড়াও কিছু সূত্র বলছে, হাসিনা ঢাকা থেকে কলকাতা বিমানবন্দর বা শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরেও নামতে পারেন, তবে সেগুলি ঢাকার থেকে দূরে অবস্থিত। হাসিনার জন্য সবচেয়ে নিকটবর্তী বিমানবন্দর হচ্ছে ত্রিপুরার আগরতলা।
হাসিনার পুত্র সাজিব ওয়াজেদ জয় বসবাস করেন আমেরিকায়। কন্যা সাইমা ওয়াজেদ থাকেন দিল্লিতে। এই কারণেই ধারণা করা হচ্ছে যে, হাসিনার প্রাথমিক গন্তব্য হতে পারে দিল্লি। ( আরও পড়ুন : Bangladesh Protestইস্তফা দিয়ে বোনের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা, কপ্টারে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের উদ্দেশে )
গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি ছিল হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। রবিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হন। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছিল। সোমবার হাসিনা পদত্যাগ করেন।
রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কার্ফু আরোপ করা হয়েছিল। সোমবার থেকে তিন দিনের ছুটিও ঘোষণা করেছিল সরকার। তবে সোমবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় কার্ফু উপেক্ষা করে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। আন্দোলনকারীদের জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তবু আন্দোলন থামানো যায়নি। পরে শোনা যায়, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেনাপ্রধান। এরপরই হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসে। বাংলাদেশ গণমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মধ্যে বাংলাদেশের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ নেমে পড়েন। লাখ লাখ মানুষ হাসিনার বাসভবন ‘গণভবন’-এ ঢুকে পড়েন।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বিতর্ক উত্তাল আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে আসে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামক মঞ্চ থেকে নয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের নির্দেশ দেয়ার পর আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও পুরোপুরি থামেনি। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ একটি দাবিকে কেন্দ্র করে তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে, আর সেটি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ। রবিবার এই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়, যার ফলে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। সোমবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠলে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।